
প্রকাশিত: Tue, Dec 20, 2022 4:16 AM আপডেট: Sun, Jun 22, 2025 12:11 PM
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে গল্প করার মতো একটি ফাইনাল দেখলো বিশ্ব
বাতেন মোহাম্মাদ
ফাইনাল চলাকালীন বাসে থাকায় মোবাইলে বারবার বাফারিং হচ্ছিলো, তাই পুরো ম্যাচ নিরবচ্ছিন্নভাবে দেখতে পারিনি, এজন্য কোনো পোস্টম্যাচ এনালাইসিস লিখিনি। এখন দেখলাম। যদিও আমি ম্যাচ শুরুর অনেক আগেই এক এনালাইসিসে বলেছিলাম, টেকনিকালি আর্জেন্টিনা ফ্রান্স থেকে এগিয়ে। আমি এখনো সেই আগের কথায় আছি। কাল প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনা যা করে দেখালো ট্যাকটিকালি সেটা ফুটবল স্কুলিংয়ে নিশ্চিতভাবেই পাঠ্য হবে। বিশেষ করে ডি মারিয়াকে ব্যবহার। ডি মারিয়া দুই পায়ের খেলোয়াড়। তবে তাঁর ফেভারিট জায়গা রাইট উইং। কিন্তু ফাইনালে স্কালোনি একটা চমক নিয়ে আসলেন সবার জন্য। ফ্রান্স, ডি মারিয়াকে রাইট উইংয়ে ধরে প্ল্যান সাজিয়েছে। তাঁরা হয়তো ভেবেছিলো, ডি মারিয়া ও মেসি যেহেতু বাম পায়ে বেশি খেলে এবং কাছাকাছি স্পেসে খেলে তাই এই পাশটা জমাট রাখলেই দুজন স্পেস কন্সট্রেইন্টে পড়বে। তাই অপেক্ষাকৃত অভিজ্ঞ ডিফেন্ডারদের এই পাশে রেখে তরুণ কুন্দেকে রেখেছিলো লেফটে। কিন্তু আর্জেন্টিনা সবাইকে চমকে দিয়ে ডি মারিয়াকে লেফটে দিয়ে দিলো।
এইটার দুইটা কারণ-[এক] রাইটে ডি মারিয়া খেললে মেসির স্পেস কমে যাবে এবং ফ্রান্স এক ডিফেন্সে দুইজনকেই কাট অফ করবে। [দুই] এমবাপ্পেকে ডি মারিয়া সামলাতে পারবে না গতির জন্য। তাই মলিনাকে একটু ওপরে টেনে রাইট ব্যাক কাম রাইট উইং হিসাবে খেলিয়েছে। এতে একজন বাড়তি ডিফেন্ডার এই প্রান্তে রেখে এমবাপ্পে ফরোয়ার্ড লাইন (জিরুদ) আর ব্যাক ওয়ার্ড লাইন ( গ্রীজম্যান, রাবিও, চুয়ামেনি) কে কাট অফ করেছে। এছাড়াও মেসিকে একটু ওপরে খেলিয়েছে যাতে তাঁর মার্কাররা একটু ওপরে চলে আসে। তাতে ডিফেন্সে যে ফাঁক তৈরি হবে, সেটা কাজে লাগাবে আর্জেন্টিনা।
দ্বিতীয় গোলটা একদম সেইরকম পরিকল্পনারই ফসল। কুন্দে, ডি মারিয়াকে সামলাতে পারেনি। স্কিল ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী পারারও কথা না। যা সর্বনাশ হওয়ার তাই হয়েছে। প্রথম ২৫ মিনিটে সেই প্রান্ত দিয়েই ৬টা আক্রমণ। যেহেতু কুন্দে পারছিলো না তাই তাকে সাহায্য করতে নীচে নেমে ডেম্বেলে আরও বড় সর্বনাশ করে দিলো। যেহেতু সে প্রথাগত ডিফেন্ডার না, তাই কোথায় কোন ধরনের ট্যাকেল করতে হবে সেই ব্যাপারে অনভিজ্ঞতাই পেনাল্টি উপহার দেওয়ার কারণ। তবে ডিসিশানটা একটু হার্স মনে হলো। এতো সফট টাচে পেনাল্টি গতবারের বিশ্বকাপে দেয়নি। যাইহোক, নিয়ম অনুযায়ী এটা পেনাল্টি। অবশ্য রেফারি পরে ফ্রান্সকেও যে পেনাল্টি দিলো দ্বিতীয়ার্ধে সেটাও হার্স ডিসিশান। ওটামেন্দি সাইড প্রেস করে বলের দখল নিতে চাইসিলো। মুয়ানি যেই মাত্র বলের ডিরেকশন পরিবর্তন হয়ে গোলের এঙ্গেলে ডিফাকাল্ট হয়ে গেল সাথে সাথে পড়ে গেলো। অবশ্যই চালাকি। কিন্তু রেফারী মনে হইলো আর্জেন্টিনাকে দেওয়া পেনাল্টির প্রায়শ্চিত্ত করলো। কালকে আমার চোখে আর্জেন্টিনার সেরা পারফরমার ছিলো ম্যাক আলিস্টার। সবখানেই খেলেছে নিজেকে উজাড় করে। আক্রমণে লিংক আপ করেছে, ডিফেন্স করেছে, প্রেস করেছে। হি ওয়াজ দ্য বেস্ট ১৮ ডিসেম্বর ফাইনাল ম্যাচ।
ডি মারিয়া তাঁর কাজটা করেছেন ঠিকঠাক। অনেকে বলছেন, ডি মারিয়াকে উঠিয়ে নেওয়া ঠিক হয়নি। আমি মনে করি ঠিক ছিলো। কারণ ডি মারিয়া ডিফেন্সে সার্ভিস দেয় না, আবার প্রেস করে না। তাছাড়া ফ্রান্স যখন গ্রীজম্যান ও ডেম্বেলেকে উঠিয়ে নিলো তখন এই উইংয়ে একজন বাড়তি ডিফেন্ডারকে দরকার ছিলো কোম্যানকে আটকাতে। সেইক্ষেত্রে একুনা রাইট সাবস্টিউট। মেসির কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে যেভাবে থুরামকে কোমান দিলো সেটা দেখার মতো ছিলো। তারপর থুরামের কাছ থেকে বল পেয়ে এমবাপ্পে যেটা দেখালো সেটা পিওর ক্লাস। হাফ চান্স একটা বলকে এইভাবে গোলে পরিণত করলো সেটা অবিশ্বাস্য। তবে এখানে ওতামেন্দির দায় আছে। ১ মিনিট আগেই পেনাল্টি উপহার দেওয়ায় হয়তো সে আড়ষ্ঠ ছিলো তাই এমবাপ্পের পায়ে বল যাওয়ার পরেও সে স্লাইড ট্যাকেল কিংবা স্কয়ার ট্যাকেলে কেন গেলো না সেটা আশ্চর্য্য হইলাম। ঠিক পেছনে রমোরেও দাঁড়িয়ে রইলো। তাঁরা হয়তো ভেবেছিলো এমবাপ্পে বল পায়ে নিবে আগে তখন তাঁরা সময় পাবে। কিন্তু এমবাপ্পে এইভাবে রানিং বলে শট নেবে এবং এমন একিউট এংগেলে এটা তাদের চিন্তায় হয়তো ছিলো না।
কাল মূল ম্যাচে ফ্রান্স দুই গোল দিলেও সেগুলোকে আমি ট্যাকটিকাল গোল বলতে রাজি না। দুটোই আমার কাছে ফিজিকাল ও হিট অব দ্য মোমেন্ট গোল। কাল ফ্রান্স পুরো খেলায় বিল্ডআপ করে একটা আক্রমণও করতে পারেনি। যে দুটো গোল দিয়েছে ফুলটাইমে দুটোই প্রেস করে বল কেড়ে নিয়ে। ক্লান্ত আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়দের ক্লান্তির সুযোগ নিয়ে ফ্রান্সের ফিজিকাল ফুটবল গোলগুলো আদায় করে নিয়েছে। কাল স্কোলানি দেশেম থেকে অনেক বেশি প্রাকটিকাল ও ট্যাকটিকাল ছিলো। দেশেমের ফিজিকাল ও স্পিডি ফুটবলারের অল্টারনেটিভের যে অপশন সেটারই এডভান্টেজ পেলো কাল। তবে এই ফাইনাল যুগ যুগ ধরে মনে রাখার মতো। এমন স্নায়ুক্ষয়ী, শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনাল জীবনে দেখিনি। আর্জেন্টিনার টেকনিকের সাথে ফ্রান্সের হার না মানা সাহসী ও শক্তিশালী ফুটবলের যে প্রদর্শনী কাল হলো তাতে ফুটবল কেন বিশ্বের এক নাম্বার খেলা সেটারই জয়গান ছিলো।
আর হ্যাঁ, এমবাপ্পের কথা না বললেই নয়। স্কালোনির ট্যাকটিক্সে এমবাপ্পেকে প্রায় বোতলবন্দী করে রাখতে পেরেছিলো আর্জেন্টিনার ডিফেন্স। কিন্তু সে যে গ্রেট খেলোয়াড় তা কয়েক মিনিটের ঝলকেই বুঝিয়ে দিলো। পেনাল্টির দুই গোল বাদ দিলেও ৮১ মিনিটে যে গোলটা করলো আর ১২৯ মিনিটে চারজনকে কাটিয়ে স্পেস যেভাব তৈরি করলো তাতে এমবাপ্পেকে আপনার বর্তমান সময়ের সেরা খেলোয়াড় হিসাবে স্বীকার করে নিতেই হবে। জয় ফুটবলের। জয় মেসির। জয় আর্জেন্টিনার। জয় এমবাপ্পেরও। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে গল্প করার মতো এক ম্যাচ দেখলাম। এই এনালাইসিসের মাধ্যমে আমার বিশ্বকাপ যাত্রা শেষ হলো। অনেক মজা করেছি নানা ইস্যু নিয়ে। আশা করি জয়ের আনন্দে বাকি সব কিছু ভুলে যাবেন। দিনের শেষে প্রাপ্তির আনন্দ থেকে পবিত্র আর কিছু হতে পারে না। ফেসবুক থেকে
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
